সহবাসের দোয়া

সহবাসের দোয়া

আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি পুরুষ এবং নারীকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। নবী-রাসূল থেকে শুরু করে সবাই বিবাহ করেছেন। একজন বিবাহিত নারী ও পুরুষ তাদের যৌন চাহিদা পূরণের জন্য সহবাসে লিপ্ত হয়। লিপ্ত হওয়ার সময় ইসলামে এর কিছু নিয়ম-নীতি ও দোয়া রয়েছে।

দোয়া এক প্রকারের ইবাদত। তবে সেই দোয়া হতে হবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন স্বামী-স্ত্রীর মিলনের আগে দোয়া পড়তে বলেছেন? আজকে এই সকল বিষয় জানব। সর্বপ্রথম জেনে নেই সহবাসের দোয়া।

সহবাসের দোয়া ও নিয়ম-কানুন বাংলায় ও আরবিতে

بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

সহবাসের দোয়া বাংলায় উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবনিশ শায়তানা মা রাজাকতানা।’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি (যৌন মিলন বা সহবাস)। তুমি আমাদের কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখো। আমাদের এই মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, সে সন্তানকেও শয়তানের আক্রমণ থেকে দূরে রাখো।’

সহবাসের দোয়ার ফজিলত

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন বা সহবাস করার ইচ্ছা হয় তখন সহবাসের দোয়াটি পড়ে সহবাসে লিপ্ত হও। এই মিলনের ফলে যদি কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হযরত আলী (রা:) বলেন, সে ব্যক্তি (স্বামী ও স্ত্রী) সহবাসের ইচ্ছা করে এবং তার নিয়ত যদি এই হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে নিজেকে দূরে রাখব এবং আমার মন ঠিক রাখব আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়তে (স্ত্রীর সাথে সহবাস) মিলন করলে সওয়ার হওয়ার সাথে সাথে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হবে।

স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই যে বিষয়গুলো জেনে রাখা উচিত

শয়তান ভালোবাসে যৌনতাকে, পাশাপাশি লজ্জাস্থান দেখতে খুবই পছন্দ করে। শয়তান স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় হাজির হয় যৌনতায় নিজেকে জড়ানোর জন্য। তাছাড়া শয়তান চায় আমরা যেন যৌনকাজগুলো ইসলামের নিয়ম না মেনে করি।

যখন আমরা প্রিয়নবী (সাঃ)-এর শেখানো সহবাসের দোয়া পড়ে শুরু করব তখন শয়তান সেখান থেকে চলে যায়। যার ফলে স্বামী-স্ত্রী সহবাস হয় শয়তানের প্রভাবমুক্ত ও নিরাপদ। এই মিলনের ফলে যদি সন্তান জন্ম নেয় তাহলে তার পরবর্তী জীবনের সব ক্ষেত্রে শয়তানের দাগা থেকে নিরাপদ থাকে।

আর যদি রাসুলের শিখিয়ে দেওয়া দোয়া না পড়ে নিজের ইচ্ছামতো সহবাসে লিপ্ত হই তখন শয়তান সেই মিলনে যোগদান করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে খারাপ সংকল্প তৈরি করে। অনেক সময় দেখা যায়, রাসুলের শিখিয়ে দেওয়া নিয়ম অমান্য করে অন্য কাজ করে থাকে। আবার দাম্পত্য জীবনে সমস্যাও হয়। এই মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নেয় সেও শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি পায় না।

তাই আমাদের সকলের উচিত, বিশেষ করে যারা মুসলমান, তারা সহবাসের পূর্বে রাসুলের শিখিয়ে দেওয়া সহবাসের দোয়া পড়া।

সহবাসের এই দোয়াটি পড়া বা শেখা এখানে কোনো লজ্জার বিষয় নয়। বিবাহিত জীবনে শয়তানের প্রভাব থেকে এবং নেককার সন্তান জন্ম দিতে সহবাসের পূর্বে আমাদের এই দোয়াটি পাঠ করা জরুরি।

আমরা অনেকেই বলে থাকি যে, আমাদের সন্তানদের দ্বীনদার বানাবো। কিন্তু দেখা যায়, সন্তান নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইসলামের পথে না এসে ইসলামের বাইরে চলছে। শয়তানের কুছনায় পড়ছে। তাই আপনি এবং আপনার আশেপাশের সবাইকে এই দোয়াটি পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন এবং সবাইকে জানাতে সাহায্য করুন কেন সহবাসের দোয়া পড়া উচিত।

আল্লাহ তাআলা সকল বিবাহিত দম্পতিকে মিলনের আগে প্রিয়নবীর শেখানো সহবাসের দোয়া পড়ার মাধ্যমে শয়তানের যাবতীয় ক্ষতি ও প্রভাব থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় নিয়ম জেনে নিন

  • সহবাসের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পবিত্র থাকবেন।
  • বিসমিল্লাহ বলে সহবাস (যৌনকাজ) শুরু করা মুস্তাহাব। তবে বীর্যপাতের আগে যদি মনে পড়ে, তাহলে সাথে সাথে পড়ে নিতে হবে।
  • সহবাসের সময় যেমন পবিত্র থাকা জরুরি, তেমনি সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত, যা আল্লাহর রাসুলের সুন্নত।
  • দুর্গন্ধযুক্ত সকল কিছু পরিহার করতে হবে। দুর্গন্ধ আসে এমন কিছুই করা যাবে না। এতে মিলনের ইচ্ছা কমে যায়।
  • কেবলামুখী হয়ে সহবাস করা যাবে না।
  • সহবাসের সময় একেবারে উলঙ্গ না হওয়া। প্রয়োজনে স্বামীর পিঠের উপর একটি পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন ঢেকে রাখার জন্য।
  • নিজে তৃপ্তি পাওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেওয়া। স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি না দেওয়ার পূর্বে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
  • বীর্যপাতের সময় মনে মনে সহবাসের দোয়া পড়া।
  • স্ত্রীর মাসিকের বা পিরিয়ডের সময় সহবাস না করা।
  • চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া।
  • স্ত্রীর যৌনাঙ্গের দিকে তাকিয়ে সহবাস না করা।
  • বিদেশে বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে সহবাস না করা।
  • সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত কম কথা বলা।
  • জোহরের নামাজের পরে সহবাস না করা।
  • ভরা পেটে বা খাবার খেয়েই সহবাস না করা।
  • স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কোথাও সহবাস না করা।
  • উল্টাভাবে স্ত্রীর সাথে সহবাস না করা।
  • স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে সহবাস না করা।

অধিক সময় সহবাসের দোয়া

অধিক সময় সহবাস করা যাবে এমন কোনো দোয়া নেই। স্বামী ও স্ত্রীর সহবাসের দোয়া পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তবে অধিক সময় সহবাসের কিছু পদ্ধতি ও নিয়ম আছে যা অনুসরণ করলে অধিক সময় সহবাস করা সম্ভব। তবে আপনার যদি যৌন সমস্যা থাকে, তাহলে আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে।

সহবাসের পর গোসল নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

  • সহবাসের পর সাথে সাথে গোসল না করলে গুনাহ হয়।
  • সহবাসের পর কিছুতে হাত দেওয়া যাবে না, কিছু ধরা যাবে না।
  • সহবাসের পর রান্না করা যাবে না, এতে ঘরের লক্ষ্মী চলে যাবে।
  • গোসলের পূর্বে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না।
  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না।
  • সহবাসের পর কোনো দোয়া বা জিকির করা যাবে না।
  • সহবাসের পর কারো শরীরে স্পর্শ করা যাবে না।

এছাড়াও আরও নানান কথা সমাজে প্রচলিত আছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। যা সমাজের কুসংস্কার। ইসলামে এবং হাদিসে সহবাসের দোয়া ও নিয়ম-কানুন সবকিছুই বলা আছে। আমরা আল্লাহর আদেশ এবং নবীর দেওয়া দিকনির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করব, তাহলে আমাদের দুনিয়ায় এবং আখিরাতেও শান্তি পাব। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামিক নিয়মে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।