পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত

পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এবং সেরা রিসোর্ট শহর। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে পথে দেখতে পাবেন সুন্দর পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে মেরিন ড্রাইভের মাঝখানে অবস্থিত উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানী সমুদ্র সৈকতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে একটু এগিয়ে গেলে আমরা পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাবো। মেরিন ড্রাইভ রাস্তার একপাশে বিশাল সমুদ্র, পাথুরে খাড়া ঢালে ঘেরা, আর অন্য পাশে পাহাড়ের বিস্তৃতি। পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকত এবং রাতে বালির উপর আছড়ে পড়া ঢেউ দেখলে মনে হবে যেন চারপাশে অসংখ্য রত্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বর্ষাকালে পাহাড়ি বনের এই রূপটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বাতাসে যখন প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প জমা হয়, তখন ব্যাকটেরিয়া তার সাথে বিক্রিয়া করে উজ্জ্বল আলো তৈরি করে। প্রকৃতিতে, রাতের বেলা নির্জন সৈকত এবং গভীর বনে আলো এক ঝলমলে আভা এনে দেয়। উখিয়ার পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকত বিশাল আকাশের নীচে একটি অনন্য স্বর্গ।

মেরিন ড্রাইভ ধরে পটুয়ার্টেকের দিকে গাড়ি চালালে জীবনের নানান গল্প দেখতে পাবেন। কিছুক্ষণ পর, আপনি সমুদ্র সৈকতের মাঝখানে নোঙর করা রঙিন সাম্পান দেখতে পাবেন। জেলেরা মাছ ধরে সমুদ্র থেকে ফিরে আসছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মাছ কিনতে জড়ো হয়েছে। যখন আপনি সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাবেন, তখন আপনি লাল কাঁকড়া দেখতে পাবেন। ভাটার সাথে সাথে পাথরগুলো জেগে ওঠে। পাথরের সাথে আছড়ে পড়া ঢেউগুলো এক অন্যরকম সৌন্দর্য যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

যখন আপনি কক্সবাজার শহর ছেড়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে পটুয়ার্টেকের দিকে যাবেন, তখন আপনি অবশ্যই চোখ সরাতে পারবেন না। আপনার ডানদিকে উত্তাল সমুদ্র এবং বামে পাহাড়ের গর্জন আপনাকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যাবে।

পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকতে কীভাবে পৌঁছাবেন

পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন করতে, আপনাকে প্রথমে কক্সবাজার শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য বাস, ট্রেন এবং বিমান ব্যবহারের বিকল্প রয়েছে। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার বাস প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। বাসে কক্সবাজার পৌঁছাতে সাধারণত ৮-১০ ঘন্টা সময় লাগে। আপনি সরাসরি কাউন্টারে বা অনলাইনে আপনার টিকিট কিনতে পারেন।

বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন দুটি ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:১৫ মিনিটে এবং কক্সবাজার এক্সপ্রেস রাত ১০:৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। এই ট্রেনগুলি কক্সবাজার পৌঁছাতে প্রায় ৯ ঘন্টা সময় লাগবে। এছাড়াও, আপনি যদি চান, তাহলে প্রায় ৫০ মিনিটে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছাতে পারবেন।

কক্সবাজারের ডলফিন মোড় থেকে গাড়ি, সিএনজি বা লুনার গাড়ি ভাড়া করে মেরিন ড্রাইভ রোড ব্যবহার করে পটুয়ার্টেক আসবেন। চাঁদ থেকে গাড়ি ভাড়া প্রায় ৪,৫০০ টাকা। যদি আপনার সময় থাকে তবে আপনি সিএনজি বা অটোমেটিক ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ আরও কম হবে। সিএনজি ভাড়া ১০০০/১৫০০ টাকা। গাড়ি ভাড়া ১০০০/১২০০ টাকা।

মেরিন ড্রাইভ রোডে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থান রয়েছে, আপনি পথে সেগুলি পরিদর্শন করতে পারেন। গাড়ি সার্ভিসিং করার সময় দয়া করে এই স্থানগুলি উল্লেখ করুন।

সৈকতে কী করবেন?

পটুয়ার্টেক সৈকত ঘুরে দেখার জন্য কোয়াড বাইক ভাড়া করা যেতে পারে, এবং এখানে ঘোড়ায় চড়ার সুবিধাও রয়েছে। এছাড়াও, কক্সবাজারের অন্যান্য সৈকতের মতো, এখানেও ফটোগ্রাফির সুবিধা রয়েছে। তবে, কোনও পরিষেবা ভাড়া করার আগে, আপনাকে সবকিছু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে এবং তাদের শর্তাবলী বুঝতে হবে। অন্যথায়, আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন।

পটুয়ার্টেক কখন যাবেন?

আপনি যেকোনো সময় পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকতে যেতে পারেন। তবে বিকেলে যাওয়াই ভালো। ওই সময় ভিড় একটু কম থাকে। আর পটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ। সকালে কক্সবাজারে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দুপুরের একটু আগে রওনা হয়ে মেরিন ড্রাইভের কোনো রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেতে পারেন। দুপুরের খাবারের পর পটুয়ার্টেক চলে যাবে।

কোথায় থাকবেন?

পাটুয়ার্টেক সমুদ্র সৈকতের কাছে আজকাল বেশ কিছু হোটেল এবং রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনানী রয়্যাল রিসোর্ট, রয়্যাল টিউলিপ রিসোর্ট, লা বেলা রিসোর্ট এবং ডেরা রিসোর্ট। তবে কক্সবাজার এখান থেকে খুব কাছে, তাই এখানে থাকার চেয়ে কক্সবাজারে এসে আপনার পছন্দের হোটেলে থাকাই ভালো।

কোথায় খাবেন

আজকাল মেরিন ড্রাইভে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। ড্রাইভারকে বললে সে আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে। সমুদ্র সৈকতের কাছে কিছু থং শপ আছে যেখানে আপনি জল, কোক, কেক ইত্যাদি হালকা খাবার কিনতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি কক্সবাজারের যেকোনো রেস্তোরাঁয় খেতে পারেন। কক্সবাজারে পৌষী, ধানসিঁড়ি, রোদেলা, ঝাউবান এবং নিরিবিলি রেস্তোরাঁ বেশ জনপ্রিয়।