আসালামু আলাইকুম বন্ধুরা , আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো কিভাবে আপনি ভিডিও এডিটিং শিখবেন এবং ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখলে বা জানলে আপনার কি উপকার হবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।
ভিডিও এডিটিং কি?
ভিডিও এডিটিং একটি অনেক আনন্দের পেশা। এখানে আপনি আপনার মন মত ক্রিয়েটিভ কাজ করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা ছাড়াও অর্থ আয় করতে পারবেন। ইদানিং ভিডিও কন্টেন্ট এর চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভিডিও এডিটরদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ লোক না থাকার কারণে দেশে এবং বিদেশে ভিডিও এডিটিং প্রফেশনালদের কদর বেড়ে চলেছে। আর তাই আমাদের আজকের লেখায় ভিডিও এডিটিং কি, কীভাবে এডিটর হওয়া যাবে এবং এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভবিষ্যৎ কেমন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সহজ কোথায় যেকোনো ভিডিও ফুটেজকে পছন্দমতো এডিট করে একটি গল্প ফুটিয়ে তোলাকে ভিডিও এডিটিং বলে। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বা কোন বিষয় বাস্তবের মত ফুটিয়ে তলার জন্য ভিডিও অনেক কাজের একটি মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়।
আমরা যখন কোন দৃশ্য ধারণ করি তখন তা এলোমেলো বা বিচ্ছিন্নভাবে থাকে। একজন এডিটর সেই “র” ফুটেজ গুলোকে একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগিয়ে তাতে কালার কারেকশন, নয়েজ রিমুভ সহ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সেট করে সুন্দর আউটপুট তৈরি করে ভিডিও এডিটিং করে।
মোটকথা, কোন ভিডিও এডিটর সফটওয়্যার দিয়ে মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা ভিডিও সুন্দর গোছালো করে দর্শকদের মাঝে উপস্থাপন করে দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদ্ধতিকে ভিডিও এডিটিং বলে।
কিভাবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হবেন?
প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটর হতে হলে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে বা ঘাটাঘাটি করতে হবে এবং এটি শেখা দুই একদিনের কাজ নয় , এটি শিখতে হলে আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে এবং আপনার ধৈর্য থাকতে হবে। এখানে আপনি নিত্য নতুন মানুষদের সাথে যেমন কাজ করতে পারবেন। নিচে একজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হওয়ার জন্য কি কি করতে হবে তা আলোচনা করা হলো।
ক্রিয়েটিভ হতে হবে
ভিডিও এডিটিং ইন্ডাস্ট্রি হলো গ্রাফিক্স ইন্ডাস্ট্রি এর মতই ক্রিয়েটিভ একটি সেক্টর। এখানে কপি পেস্ট করে চালিয়ে দেওয়ার মত কোনো বিষয় নেই। ভিডিও এডিটিং করার সময় আপনি যত বেশি সময় দিবেন বা ক্রিয়েটিভ হবেন আপনার ভিডিও তত ভালো হবে বা মানুষ পছন্দ করবে।
আরও পড়ুন: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি
ধৈর্যশীল হতে হবে
এডিটিং অনেক ধৈর্যের কাজ। এখানে প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের উপর নজর দিতে হয় তা নাহলে সামান্য ভুল পুরো আপনার ভিডিও এক্সপেরিয়েন্সকে মানুষ ভুল ভাববে। আপনাকে প্রতিটি ফুটেজ বার বার দেখতে হবে এবং সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে হবে।
এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে হবে
প্রতিটি এডিটিং সফটওয়্যার আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি। তারপরেও আপনাকে মোটামুটি ভালো মানের কতকগুলো সফটওয়্যার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। যদিও সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কমন টুলস থাকে।
এডিটিং সিক্রেটস জানতে হবে
প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং করতে চাইলে আপনাকে শিখতে বা জানতে হবে কীভাবে কম কাজ করেই ভালো আউটপুট তৈরি করা যায়। অর্থাৎ অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় ভিডিও এডিটিং সেক্টরেও অনেক এডিটিং সিক্রেটস আছে যেগুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে।
স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে
একজন এডিটরের স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তাছাড়া “র” ফুটেজ থেকে একটি কমপ্লিট গল্প তৈরি করা কখনই সম্ভব হবে না। আপনার যদি স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে ভিডিও অ্যাঙ্গেল, কালার গ্র্যাডিয়েন্ট, স্পেশাল ইফেক্ট ইত্যাদি সঠিকভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন যা আপনার ভিডিও কোয়ালিটি বাড়াতে দ্বিগুণ সহায়তা করবে।
স্পেশাল ইফেক্ট জানতে হবে
একটি সাধারণ ভিডিও-কে স্পেশাল ইফেক্টের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ক্লাস বানানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে যারা ভিডিও এডিটিং করেন তারা মোটামুটি সবাই Green Screen এবং VFX সম্পর্কে জানে যা এডিটিং এ স্পেশাল ইফেক্টস হিসেবে যোগ হয়।
প্রোজেক্ট করতে হবে
আপনি যখন বুঝতে পারবেন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়ে গেছে তখন চেষ্টা করবেন প্রোজেক্ট করার কারণ নিজে নিজে প্রোজেক্ট করার পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
আপ টু ডেট থাকতে হবে
এডিটিং ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাকে নিয়মিতভাবে এডিটিং ট্রেড সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকতে হবে। তা নাহলে আপনি সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ও অন্যান্য বিষয়ে পিছিয়ে পড়বেন এবং আপনার কাজের মান খারাপ হতে থাকবে।
আরও পড়ুন: ফ্রি ফেসবুক ডাউনলোড করব কিভাবে ২০২৪
জনপ্রিয় কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
আপনি কখনই ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে খুব ভালো মানের কাজ করতে বা শিখতে পারবেন না কারণ ফ্রি সফটওয়্যারগুলোতে সব টুলস বা ফিচার থাকে না , যেগুলা আপনি প্রিমিয়াম সফটওয়্যারগুলোতে পেয়ে যাবেন। কারণ এই প্রিমিয়াম সফটওয়্যারগুলো একেকটি ফিজিক্যাল স্টুডিও এর মত। অনেক ফিচার আর সুবিধা থাকতে হয় জন্য এগুলো তৈরি ও পরিচালনা করা ব্যয়বহুল। নিচে কিছু জনপ্রিয় ভিডিও এডিটিং করার সফটওয়্যার তালিকা দেয়া হলো:
- Wondershare Filmora
- Adobe After Effects
- Adobe Premiere Pro
- Vegas Pro
- Camtasia
ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ার
ভিডিও এডিটিং একটি গতিশীল ইন্ডাস্ট্রি। সময়ের সাথে সাথে এডিটরের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। আজকাল ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এ জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের তৈরি হচ্ছে।
Video Editing শেখার পরে আপনার পারফর্মেন্স যদি দিন দিন ভালো হতে থাকে এবং আপনি যদি কোথাও জব করতে থাকেন তাহলে খুব সহজেই হেড অফ ভিডিও এডিটিং এবং তার পর পুরো প্রোডাকশন হাউজের ভিডিও এডিটিং ম্যানেজার পদে উন্নীত হতে পারবেন শুধুমাত্র আপনার স্কিল দিয়ে ।
আপনি হয়তো জানেন না একজন ভালো প্রফেশনাল মানের ভিডিও অডিটরের বেতন কেমন হতে পারে বা হয়, জানলে হয়তো আপনি অবাক হবেন। আপনি যদি অনলাইন এবং অফলাইনে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে ভিডিও এডিটিং আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে নিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
যেহেতু দিন দিন অনলাইন এবং অফলাইনে ভিডিও এডিটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার হিসেবে প্রচুর এগিয়ে যাচ্ছে তাই আপনি এটাকে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। আমরা নিয়মিত অনুশীলন, পরিশ্রমের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই কিন্তু একজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো বা আপনাদের উপকারে আসলো কিনা সেটা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। কারণ আপনাদের যথাযত মন্তব্য আমাদেরকে উৎসাহিত করে আরো নতুন নতুন বিষয় তুলে ধরতে। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে পোস্টিটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানাতে উৎসাহী করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন , আল্লাহ হাফেজ।
Pingback: পাসওয়ার্ড ছাড়া কিভাবে wifi কানেক্ট করবেন - Techguccho