ন্যানো টেকনোলজি কি ?

ন্যানো টেকনোলজি কি ? ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ও সুবিধা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক – পাঠিকা , আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি সেটি হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি কি?

আসলে আমরা অনেকেই জানিনা যে এই ন্যানো টেকনোলজিটা কি বা এটা কি কাজে লাগে কিংবা এর কাজটা কি? অথচ আমরা দৈনন্দিন জীবনে মেগা, গিগা, ন্যনো এই শব্দ গুলো শুনে আসছি বা বলে আসছি। যদিও মেগাবাইট, গিগাবাইট এই শব্দগুলো ডাটার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এখন কথা হলো, ন্যানো টেকনোলজিটা আসলে কি?

ন্যানো টেকনোলজি হচ্ছে এক ধরনের টেকনোলজির নাম। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মানুষের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহের কথা চিন্তা করে আবিষ্কার করা হচ্ছে নতুন নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা মানুষ কাজে লাগাচ্ছে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ভাবে।

ন্যানো টেকনোলজি কি?

এখন কথা হলো আমরা মোটামুটি হয়তো জানি যে, পরমাণু ও অণু  এই দুইটি জিনিস কি । পারমাণবিক ও আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুনভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যানো টেকনোলজি। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ন্যানো মিটার। তাহলে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন কত ছোট এই সংখ্যা!

ন্যানো টেকনোলজির জনক কে ?

১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) তার “There’s Plenty of Room at the Bottom ”  আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন। তাই রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।

ন্যানো শব্দের অর্থ?

ন্যানো মেট্রিক পদ্ধতি মাপার বা পরিমাপ করার একক। ন্যানো শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘nanos’ থেকে। থেকে। ন্যানোর অভিধানিক অর্থ হল dwarft। আর এই ন্যানোমিটাটর স্কেলের সাথে পৃথিবীর যত প্রযুক্তি সম্পর্কিত সকল কিছুই ন্যানো টেকনোলজির অন্তর্ভুক্ত। ন্যানো টেকনোলজির আরেক নাম হলো ন্যানো প্রযুক্তি। একে সংক্ষেপে ন্যানোটেক- ও বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

যেসকল ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়

আক্ষরিক অর্থে ন্যানো অর্থ সূক্ষ্ণ, ছোট হলেও এটি অনেক ধরনের বড় বড় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। বর্তমানে পারমাণবিক ও আণবিক পর্যায়ে বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গুলোতে এর ব্যবহার দেখেই বোঝা যায় এটি বর্তমান বিশ্বে কতটা প্রয়োজনীয় ছিল বা আছে। যেসব ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যাবহৃত হয় তা উল্লেখ করা হলো,

  • খাদ্য সংস্থা
  • পানীয় সংস্থা
  • ডিফেন্স
  • কৃষিক্ষেত্র
  • চিকিৎসা ক্ষেত্র
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
  • পরিবেশ বিজ্ঞান
  • ইলেকট্রনিকস
  • মেডিক্যাল বিজ্ঞান
  • ফার্মাস
  • বিভিন্ন গবেষণা
  • উন্নয়ন প্রকল্প
  • বায়োটেকনিক্যাল ক্ষেত্রে
  • শিক্ষা ব্যবস্থায়
  • পন্য উন্নয়নে

এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলোতেও এই ন্যানো টেকনোলজি প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করা হচ্ছে।

ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

আপনি জানেন কিনা জানিনা, ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে এমন এক ধরনের বাল্ব তৈরি সম্ভব যা মানবজীবনে বিপুল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই বাল্বগুলো অতি সূক্ষ্ণভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এই বাল্বগুলো ব্যবহার করার ফলে মানুষের বিদ্যুৎ খরচ অনেকাংশে কমে গিয়েছে। তাছাড়াও এই বাল্বের আলের কোনো ধরনের তারতম্য ঘটবেনা। বরং আলো পাওয়া যাবে বর্তমান সাধারন বাল্বগুলোর থেকে অনেক বেশি।

ন্যানো প্রযুক্তি এমন এক ধরনের সার তৈরি করা সম্ভব, যে সার জমিতে প্রয়োগ করার ফলে ফসল উৎপাদন করা যাবে প্রচুর পরিমাণে যা আপনার আমার কল্পনার বাহিরে।

আমার সবাই জানি বর্তমান পৃথিবীতে বায়ু দূষণের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্প কারখানার ধোঁয়া সব মিলিয়ে বর্তমানে বায়ুদূষণ পৌঁছে গেছে এক উচ্চমাত্রায়! ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে চাইলেই বায়ু দূষণ রোধ করা যায় কিছুটা। এই বায়ু দূষণের হার কমিয়ে আনতে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন কিভাবে বায়ু দূষন কমিয়ে আনা যায়।

আরও পড়ুন: ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

আমাদের দেশে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এখন আধুনিক সৌরশক্তি ব্যবহার করেন। মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের সৌরচালিত ব্যাটারি কিনতে পাওয়া যায়। যেগুলো চার্জ করার জন্য কোনো প্রকার কারেন্টের প্রয়োজন হয় না। বরং সূর্যের আলোতে সেগুলো অটোমেটিক চার্জড হয়ে যায়। এগুলোর দামও খুব একটা বেশি পড়ে না। সবার হাতের নাগালের মধ্যেই স্বল্প মূল্যে ব্যাটারি গুলো মার্কেটে বা বিভিন্ন সুপারশপে কিনতে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির কল্যাণেই এটি সম্ভবপর হয়েছে। তাই বলা যায় মানুষের জীবনে সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির বড় একটি ভূমিকা রয়েছে।

ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা

  • ন্যানো টিউব বা ন্যানো পার্টিকেল এসব ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেক। ফলে সকল বস্তু উন্নত, হালকা ও কম দামী হচ্ছে।
  • এই টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
  • খাদ্যদ্রব্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্য নেয়া হচ্ছে।
  • ন্যানো ডায়োড এর মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে দারুন বিস্ময়কর পরিবর্তন হচ্ছে।
  • ন্যানোটেক দিয়ে তৈরিকৃত সকল ইলেকট্রনিকস বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে।
  • এর মাধ্যমে সৌরশক্তিকে নানাভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে।
  • এর সাহায্যে তৈরি রোবট বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা

  • ন্যানো টেকনোলজির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটি মানব দেহের জন্য প্রচুর ক্ষতিকর!
  • এছাড়া এর দ্বারা তৈরি ইলেকট্রনিকস পণ্যগুলো ধীরে ধীরে কম দামের দিকে গেলেও এখন এটা অনেক ব্যয়বহুল। যার ফলে পরিবর্তন হতে এখনো সময় লাগছে।

শেষ কথা

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনারা এতটুকু হলেও জানতে পড়েছেন যে , ন্যানো টেকনোলজি কি, ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে বা কোথায় কোথায় ব্যবহার হচ্ছে, এর সুবিধা অসুবিধা গুলো কি ইত্যাদি।

যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানবেন আর সম্ভব হলে পোস্টটি শেয়ার করবেন যাতে আপনার আশেপাশের মানুষজনও জানার সুযোগ পায় , ধন্যবাদ সবাইকে।

1 Comment

Comments are closed