কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি

নেটওয়ার্কিং শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত।জালের মতো বিস্তৃতি বোঝাতে নেটওয়ার্ক শব্দ ব্যবহার করা হয়। চাকুরি, রাজনীতি,ব্যবসা ইত্যাদিতে নিজেদের স্বার্থে যোগাযোগ কিংবা পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য নেটওয়ার্ক সৃষ্টির প্রয়োজন হয়। ঠিক একইভাবে একের অধিক কম্পিউটারের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে সংযোগ ব্যবস্থাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা হয়।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি এ বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।এই ধরনের সংযোগ ব্যবস্থার জন্য কিছু বিশেষ ধরনের মিডিয়া এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইস প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে। তো চলুন, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের গুরুত্ব:

আধুনিক বিশ্বে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে:

  • তথ্য আদান-প্রদান: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। ইমেইল, মেসেজিং, ফাইল শেয়ারিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায়।
  • যোগাযোগ: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা দূর-দূরান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ভিডিও কলিং, ভয়েস কলিং, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায়।
  • সহযোগিতা: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রকল্পে একসাথে কাজ করতে পারি। ক্লাউড স্টোরেজ, ভার্চুয়াল মিটিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায়।
  • বিনোদন: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিনোদন উপভোগ করতে পারি। স্ট্রিমিং সার্ভিস, অনলাইন গেমিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায়।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো দুই বা ততোধিক কম্পিউটার বা ডিভাইসের সমষ্টি, যেগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এই যুক্ত থাকাটা হতে পারে তারের মাধ্যমে (যেমন, ইথারনেট ক্যাবল) অথবা তারবিহীনভাবে (যেমন, ওয়াই-ফাই)।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি কি ও কত প্রকার / What are the types of computer networks?

নেটওয়ার্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে আমরা জানবো মালিকানাভিত্তিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি কি ও কত প্রকার?

computer network

মালিকানার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ২ প্রকার:

  • পাবলিক নেটওয়ার্ক
  • প্রাইভেট নেটওয়ার্ক

১. পাবলিক নেটওয়ার্ক কী?
যে নেটওয়ার্ক কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, তাকে পাবলিক নেটওয়ার্ক বলে। এই নেটওয়ার্কে প্রবেশের জন্য কারো অনুমোদন নিতে হয় না এবং যেকোনো সময় নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা যায়।

পাবলিক নেটওয়ার্কে যেকেউ যেকোনো সময় প্রবেশ করতে পারে বিধায় এখানে অনেক বেশি ট্রাফিক থাকে। ফলে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড তুলনামূলক কম এবং ডেটা প্রাইভেসি খুবই কম।
পাবলিক নেটওয়ার্কের উদাহরণ হলো ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN।

২. প্রাইভেট নেটওয়ার্ক কী?
যে নেটওয়ার্ক নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকে এবং সেই কর্তৃপক্ষ দ্বারা সর্বদা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে।

প্রাইভেট নেটওয়ার্ক কোনো কম্পিউটার চাইলেই যখন-তখন প্রবেশ করতে পারে না। এজন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তাই এখানে ট্রাফিকের পরিমাণ কম থাকে, ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড অনেক বেশি থাকে এবং এটি অনেক নিরাপদ।

প্রাইভেট নেটওয়ার্কের উদাহরণ হলো লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রভৃতি। নেটওয়ার্ক প্রভৃতি।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ / Types of Computer Networks

এবার আসুন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি এর মূল প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নিই।

ভৌগোলিক অবস্থার ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ৫ প্রকার। যথা-

  • পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN)
  • লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN)
  • মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN)
  • ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (CAN)
  • ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN)

১. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN)
সাধারণত ১০ মিটার বা তার চেয়েও কম এলাকার মধ্যে একাধিক কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ডিভাইসের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা PAN বলে।

এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় ছোট কোনো দোকান বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, রাউটার, ক্যামেরা ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য।

২. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN)
ছোট আয়তনের অফিস, আদালত, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃসংযোগ তৈরি করতে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN ব্যবহার করা হয়।

এই নেটওয়ার্কের কাভারেজ সাধারণত ১০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে একাধিক রিপিটার ব্যবহার করে এই আয়তন ১ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়।

আমাদের চারপাশে যেসব ছোটখাটো অফিস কিংবা কয়েক তলার ভবন আছে সেগুলোতে বেশিরভাগ সময় ল্যান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। এতে প্রতি সেকেন্ডে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড ১০ মেগাবাইট থেকে ১০ গিগাবাইট পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে রিং, স্টার কিংবা বাস টপোলজি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তার হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ও কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।

৩. মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN)
যখন কোনো শহর বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত অনেকগুলো কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসকে সংযুক্ত করতে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN বলে।

MAN এর কাভারেজ LAN এর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে এটি ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে WAN এর চেয়ে কম কাভারেজ দেয়।

মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্কের কাভারেজ সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখানে ট্রান্সমিশন মাধ্যম হিসেবে টেলিফোন লাইন, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

আর MAN এ তারবিহীন টান্সমিশন মাধ্যম ব্যবহার করা হলে তাকে ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে WMAN বলে। তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

MAN এর স্পিড সাধারণত প্রতি সেকেন্ডে ৩৪ মেগাবাইট থেকে ১৫৫ মেগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন: ক্লাউড কম্পিউটিং কি? কত প্রকার, কীভাবে কাজ করে

৪. ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক কি?
একাধিক LAN কে সংযুক্ত করে ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক বা CAN তৈরি করা হয়।

যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে একাধিক ভবনে ব্যবহৃত LAN নেটওয়ার্ককে একটি মাত্র নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয় তখন সেই পুরো নেটওয়ার্কে CAN বলে।

বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় অফিস-আদালত, ফ্যাক্টরির একাধিক বিভাগের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশন সহজ করতে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এর কাভারেজ সর্বোচ্চ ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৫. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN)
দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কম্পিউটার কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN ব্যবহার করা হয়।

আজকের দিনে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি সেটা WAN এর মাধ্যমেই তৈরি। আর WAN-ই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে টেলিফোন লাইন, মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল এবং ব্যাপকভাগে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। এর স্পিড সাধারণত ১২০০ bps থেকে ২৪ Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।

নেটওয়ার্ক টপোলজি কি / What is network topology?

আশা করছি এতক্ষণে বেশ ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি।

এবার আসুন এর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই। তা হলো নেটওয়ার্ক টপোলজি কি।

নেটওয়ার্ক টপোলজি হলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসগুলোর মধ্যকার সাংগঠনিক রূপ। অর্থাৎ ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে কীভাবে সংযুক্ত আছে তার একটি নকশাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে।

নেটওয়ার্ক টপোলজি কত প্রকার? কি কি?

computer network

কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের টপোলজি থাকতে পারে। সাধারণত যেসব টপোলজি দেখা যায় তার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক টপোলজি মূলত ৬ প্রকার। সেগুলো হচ্ছে-

  • স্টার টপোলজি (Star Topology)
  • রিং টপোলজি (Ring Topology)
  • বাস টপোলজি (Bus Topology)
  • ট্রি টপোলজি (Tree Topology)
  • মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
  • হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology)

উপরে উল্লিখিত এসব টপোলজি সম্পর্কে অন্য একটি ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই এখানে এ সম্পর্কে কিছু লিখলাম না।

নেটওয়ার্ক ডিভাইস কী কী / What are network devices?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে শুধু কম্পিউটার হলেই চলে না। এর পাশাপাশি আরও কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রয়োজন পড়ে।

নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলো হলো মডেম, রাউটার, হাব, সুইচ, গেটওয়ে, ব্রিজ, NIC ইত্যাদি।

বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্কের নাম কি? / What is the name of the world’s first network?

আমাদের অনেকের মাঝেই এই প্রশ্নটি আছে। কৌতূহলবশত জানতে ইচ্ছে করে বিশ্বের প্রথম Computer Network কোনটি। আপনার মাথায় যদি একই প্রশ্ন থাকে তাহলে উত্তরটা জেনে নিন।

বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্কের নাম হলো ARPANET। ১৯৬৯ সালে আরপানেট তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করার জন্য। ARPANET। ১৯৬৯ সালে আরপানেট তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করার জন্য।

শেষ কথা

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। এটি আমাদেরকে তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ, সহযোগিতা এবং বিনোদন করার সুযোগ দিয়েছে। আশা করি, এই ব্লগটি পড়ে আপনি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি সেটা আপনার আসে পাশের মানুষদেরকে জানাতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। ধন্যবাদ সবাইকে’

1 Comment

Comments are closed