বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে কম্পিউটার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবে সহজে বহনের সুবিধা এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে ল্যাপটপের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মহামারির সময় অনলাইন ক্লাস এবং হোম অফিসের জন্য নতুন ল্যাপটপ কেনার পাশাপাশি অনেকেই পুরোনো ল্যাপটপ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ল্যাপটপ স্লো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যদি আপনার ল্যাপটপ স্লো হয়ে যায়, তবে কিছু সহজ উপায়ে আপনি তার গতি বৃদ্ধি করতে পারেন। নিচে এমন কিছু কার্যকরী টিপস দেওয়া হলো যা আপনার ল্যাপটপকে দ্রুততর করতে সহায়তা করবে।
১. একসঙ্গে অনেকগুলো ট্যাব না খুলে রাখা
ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় একসঙ্গে অনেকগুলো ট্যাব খুলে রাখা ল্যাপটপের গতি ধীর করতে পারে। প্রতিটি খোলা ট্যাবই মেমোরি এবং প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহার করে। তাই শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ট্যাবগুলো খোলা রাখুন এবং অতিরিক্ত ট্যাবগুলো বন্ধ করুন। এতে ল্যাপটপের রিসোর্স সাশ্রয় হবে এবং এর গতি বাড়বে।
২. অব্যবহৃত অ্যাপ এবং জাঙ্ক ফাইল ডিলিট করা
অব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলো এবং টেম্প ফাইলগুলি হার্ডড্রাইভে অনেক জায়গা দখল করে রাখে, যা সিপিউ থেকে রিসোর্স শুষে নেয়। নিয়মিতভাবে অব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলো আনইনস্টল করুন এবং জাঙ্ক ফাইল ডিলিট করুন। এইভাবে স্টোরেজ স্পেস খালি করে আপনার কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
৩. স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করা
অনেক প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ল্যাপটপ চালু হওয়ার সাথে সাথে রান হতে থাকে, যা বুট-আপের গতি কমিয়ে দেয়। উইন্ডোজ ১০-এ টাস্ক ম্যানেজার খুলুন এবং স্টার্ট-আপ ট্যাব থেকে এই প্রোগ্রামগুলো চিহ্নিত করুন। প্রয়োজনহীন প্রোগ্রামগুলো অক্ষম করুন, যা আপনার ল্যাপটপের বুটিং স্পিড বাড়াতে সহায়তা করবে।
৪. নিয়মিত ম্যালওয়্যার স্ক্যান করা
ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস আপনার ল্যাপটপের গতি কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিতভাবে ম্যালওয়্যার স্ক্যান করুন। এ জন্য একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন যা আপনার ল্যাপটপকে ভাইরাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক সফটওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখবে। স্ক্যান চলাকালীন সময়ে যে কোনো সন্দেহজনক সফটওয়্যার শনাক্ত হলে তা মুছে ফেলুন।
৫. হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করা
হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করার মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপের গতি বৃদ্ধি করতে পারেন। সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD) ইনস্টল করা একটি কার্যকরী পদ্ধতি। SSD গতি বৃদ্ধি করে কারণ এটি বুট করা, শাটডাউন করা, এবং প্রোগ্রাম চালু করার সময় অপেক্ষাকৃত দ্রুত। এটি আপনার ল্যাপটপকে অনেক বেশি দ্রুততর করে তুলবে। অতিরিক্তভাবে, RAM বাড়ানোও সাহায্য করতে পারে।
৬. ল্যাপটপ পরিষ্কার রাখা
ধুলো এবং ময়লা ল্যাপটপের ভেন্টে জমে গিয়ে ওভারহিটিংয়ের কারণ হতে পারে। ওভারহিটিং হলে প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ল্যাপটপের গতি কমিয়ে দেয়। নিয়মিতভাবে কম্প্রেসড এয়ার ব্যবহার করে ভেন্ট এবং ফ্যান পরিষ্কার করুন। এতে ল্যাপটপ শীতল থাকবে এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
৭. রিসাইকেল বিন খালি করা
অনেকে রিসাইকেল বিন খালি করতে ভুলে যান, যা স্টোরেজ স্পেস দখল করে রাখে এবং ল্যাপটপ স্লো হয়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে রিসাইকেল বিন খালি করুন। এছাড়া, Shift + Delete কমান্ড ব্যবহার করে ফাইলগুলো পার্মানেন্টলি ডিলিট করুন যাতে আপনার স্টোরেজ স্পেস খালি থাকে এবং ল্যাপটপের গতি বজায় থাকে।
৮. পাওয়ার সেটিংস অপটিমাইজ করা
ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিংস অপটিমাইজ করাও গতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। উইন্ডোজে পাওয়ার অপশনস-এ গিয়ে হাই পারফরম্যান্স প্ল্যান নির্বাচন করুন। এটি বেশি ব্যাটারি খরচ করতে পারে, কিন্তু ল্যাপটপের পারফরম্যান্স উন্নত করতে সাহায্য করবে। ম্যাক ব্যবহারকারীদের জন্য, সিস্টেম প্রেফারেন্সেসে গিয়ে এনার্জি সেভার অপশনগুলো চেক করুন।
৯. ডিফ্র্যাগমেন্ট করা
যদি আপনার ল্যাপটপে ট্র্যাডিশনাল হার্ড ড্রাইভ (HDD) থাকে, তাহলে ডিফ্র্যাগমেন্ট করা গতি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। ফাইলগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে, হার্ড ড্রাইভে অ্যাক্সেস করতে বেশি সময় লাগে। উইন্ডোজের ডিফ্র্যাগমেন্টার টুল ব্যবহার করে ফাইলগুলো পুনর্গঠিত করুন। SSD থাকলে এই পদক্ষেপ প্রযোজ্য নয়, কারণ SSD ভিন্নভাবে কাজ করে।
১০. সফটওয়্যার এবং ড্রাইভার আপডেট রাখা
আপনার অপারেটিং সিস্টেম, ড্রাইভার এবং সফটওয়্যারগুলো সর্বদা আপডেট রাখুন। সফটওয়্যার আপডেটগুলি পারফরম্যান্স উন্নত করে, বাগ ফিক্স এবং সিকিউরিটি প্যাচ যুক্ত করে। নিয়মিত আপডেট চেক করুন এবং ইনস্টল করুন যাতে আপনার ল্যাপটপ সর্বদা সর্বোচ্চ পারফরম্যান্সে চলে।
১১. ভিজ্যুয়াল এফেক্টস কমানো
উইন্ডোজ এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে নানা ভিজ্যুয়াল এফেক্টস থাকে যা সিস্টেমের রিসোর্স ব্যবহার করে। এই ভিজ্যুয়াল এফেক্টস কমালে ল্যাপটপের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে। উইন্ডোজে সিস্টেম প্রোপার্টিজ > পারফরম্যান্স সেটিংসে গিয়ে ভিজ্যুয়াল এফেক্টস কমান। ম্যাক ব্যবহারকারীরা অ্যাক্সেসিবিলিটি > ডিসপ্লেতে গিয়ে ট্রান্সপারেন্সি কমাতে পারেন।
১২. লাইটওয়েট অপশন ব্যবহার
ভারি সফটওয়্যারের পরিবর্তে লাইটওয়েট অপশন ব্যবহার করুন। যেমন, গুগল ক্রোমের পরিবর্তে মজিলা ফায়ারফক্স বা মাইক্রোসফট এজ ব্যবহার করুন। এছাড়া, কম রিসোর্স ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করুন যা ল্যাপটপের পারফরম্যান্স উন্নত করবে।
উপসংহার
একটি স্লো ল্যাপটপের সমস্যায় পড়লে, উপরোক্ত টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই এর গতি বাড়াতে পারবেন। ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার আপগ্রেড, সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন, এবং ফিজিক্যাল পরিষ্কারের মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে পারবেন। নিয়মিতভাবে এই টিপসগুলো পালন করলে আপনার ল্যাপটপের গতি বজায় থাকবে এবং আপনার কম্পিউটিং অভিজ্ঞতা উন্নত হবে।